মাছের মেলা- পয়লা মাঘ
বৃন্দাবনের ছয় গোস্বামীর অন্যতম রঘুনাথ দাস গোস্বামীর কথা লেখা আছে চৈতন্যচরিতামৃতের অন্ত্য খন্ডের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে।
রঘুনাথ দাসের বাড়ি ছিল এখনকার হুগলী জেলার কেষ্টপুর গ্রামে। ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে খুবই কাছে সে গ্রাম। প্রতিবছর পয়লা মাঘ সেখানে বড় মেলা হয়।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ মাছ।ঘর সাজানোর নয়, খাওয়ার মাছ। অতি বিশালাকৃতি এবং তুলনায় স্বল্প পরিচিত মাছও এখানে পাওয়া যায়,
যা কিনতে, খেতে ও
দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান।
পরম বৈষ্ণব রঘুনাথ দাস গোস্বামীর সঙ্গে কিভাবে মাছ কেনাবেচা
ও খাওয়ার এই পার্বণ জড়িয়ে গেল তা স্পষ্ট নয়।রঘুনাথ দাস গোস্বামীর জীবন বেশ আকর্ষনীয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকের সপ্তগ্রাম এক বড় বন্দর। তার শাসক মজুমদার বংশীয় রাজা হিরণ্যদাস ও গোবিন্দদাস। হিরণ্যদাসের ছেলেপিলে নেই আর গোবিন্দদাসের এক পুত্রসন্তান।
সেই পুত্রেরই নাম রঘুনাথ।এই মজুমদাররা যে খুব বড়লোক সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। “হুগলি জেলার ইতিহাস
ও বঙ্গসমাজ” বইতে সুধীর কুমার মিত্র লিখেছেন সপ্তগ্রাম থেকে মজুমদার রাজাদের আয় বছরে ত্রিশ লক্ষ টাকা ছিল আর তা থেকে বারো লক্ষ টাকা তাঁরা গৌড়েশ্বরকে রাজস্ব হিসেবে দিতেন।
১৪৯৮ সালে রঘুনাথ দাসের জন্ম। রঘুনাথ দাসের শ্রীপাট বলে যে বাড়িটি এখন দেখলাম সেটির বা তার আশেপাশের কোনো বাড়ির অঙ্গে রাজবাড়ির লক্ষণ নেই,
কারন- ‘মুসলমান রাজত্বে রঘুনাথের বাড়ী ধ্বংস হইল’। লম্বা বারান্দার একদিকে গোটাতিনেক ঘর। আর বারান্দার খোলা দিকে ছোট উঠোন।
সেখানে একটি ছায়া দেওয়ার মত বড় গাছ। তার নিচে চাঁদোয়া টাঙ্গিয়ে কীর্তনের ব্যবস্থা । বারান্দায় রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ ছাড়াও রঘুনাথ দাসের একটি হাতে আঁকা প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে । ছবিটি চেয়ারের উপরে সাদা কাপড় পেতে বসানো ।
এই ছবি ছাড়াও তাঁর একটি মূর্তি বাড়িটিতে আছে ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পিছনের দিকে গেলে ছায়াছন্ন একটি ঘাট।
ঘাট থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে সংকীর্ণ খালের জলে । সেটিই একদা ভরন্ত সরস্বতী নদী ।অল্প ভরা মালবাহী জাহাজও অনায়াসে এখান দিয়ে পেরিয়ে যেত । আজকের পানায় ঢাকা সামান্য জলধারা দেখে সেদিনের বড় বন্দর আর তার তীরে ‘শ্রেষ্ঠ শহরের’কল্পনা করাও কঠিন ।পঞ্চদশ শতকের বৃন্দাবনও ছিল এইরকম জঙ্গলাকীর্ণ । শ্রীচৈতন্য বৃন্দাবনে গিয়ে তাঁর পার্ষদ দের কয়েকটি নগন্য জলাশয় দেখিয়ে বলেছিলেন এগুলিই শ্যামকুন্ড রাধাকুন্ড । সেই পার্ষদদের মধ্যে রঘুনাথ দাসও ছিলেন।
মহাপ্রভুর কথা শুনে রঘুনাথ দাস জলাশয় সংষ্কারে উদ্যোগী হন । জলাশয়ের ধারে ধারে তখন গজিয়ে উঠেছে চাষজমি । রঘুনাথ সে সব জমি কিনে নিতে লাগলেন । তারপর আবার বিরাট করে নতুন ভাবে খনন করলেন শ্যামকুন্ড,
রাধাকুন্ড। এ নিয়ে তাঁকে বাদশা সরকারের দরবার পর্যন্ত দৌড়োতে হয়েছিল । অনেক দেশেই হারিয়ে যাওয়া নদীকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে । আমাদের যাহা যায় তাহা যায় । অতবড় আদিগঙ্গা সেও পঙ্কিল-আবর্জনাপূর্ণ, কোথাও কোথাও পুকুরমাত্র হয়ে গেল । সেদিন বাদশার দরবারে রঘুনাথ জিতেছিলেন । আজ কি পারতেন?
তবে প্রকান্ড মাছ কিনে বিজয়ের হাসি হেসে এখান থেকে বাড়ি ফেরাই যায় । সুবিশাল এক শঙ্করমাছ সাইকেল ভ্যানে করে এনে সাজিয়ে রেখেছে বিক্রেতা । তাই দেখতে আর তার সঙ্গে সেলফি তুলতে লোকের ভিড় । মাছটির কিছু অংশ কেটে বিক্রি হয়ে গেছে কিন্তু ট্র্যাজেডির নায়কের মত খোবলানো কর্তিত পরাস্ত সেই মাছের গরিমা এতটুকু কমেনি ।
মরিয়াও সে জিতিয়া আছে । উচ্চাসনে রাখা এই মাছের নিচে ঢালু জমিতে কাঠ বাঁশের ছোট ছোট বান্ডিল নিয়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধ ।
প্রতিটি বান্ডিল কুড়ি টাকা । মাছ কিনে সারাদিন ধরে এখানেই তা ভেজে খেয়ে বনভোজন সারেন কেউ কেউ ।
তারাই কিনবেন এইসব কাঠ । অদূরে আম বাগান , কলা বাগা্ন, সেখানে জ্বলে উঠবে উনুন ।
মেয়েরা রান্না করবেন ।
ছেলেরা শুয়ে বসে গল্প করবেন ।
রঘুনাথ দাস পুরী গিয়ে শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে দেখা করলেন ।
সংসার ত্যাগ করে এসেছেন তিনি ।
সুন্দরী স্ত্রী, বাপ-জ্যাঠার অগাধ সম্পত্তির টান ঈশ্বরলাভের আকুতির কাছে হার মেনেছে । সপ্তগ্রাম থেকে প্রতিদিন ষোল ক্রোশ পথ হেঁটে মাত্র বারো দিনে পুরী পৌঁছেছেন । শ্রীচৈতন্য তাঁকে স্বরূপ দামোদরের হাতে সমর্পণ করলেন ।
সেই থেকে রঘুনাথ সারাদিন সাধনভজন করেন আর সন্ধ্যায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন ।
ভক্তরা রাতে দেবদর্শন সেরে বাড়ি যাওয়ার পথে অনাহারী বৈষ্ণব রঘুনাথকে দেখে কিছু ভিক্ষা দেন । তাই খেয়ে একদা রাজপুত্র রঘুনাথ প্রাণধারণ করেন ।শুনে শ্রীচৈতন্য খুশি হয়ে বললেন রঘুনাথ উচিত কাজ করেছেন- ‘জিহ্বার লালসে যে ইতি উতি ধায়।/ শিশ্নোদরপরায়ণ কৃষ্ণ নাহি পায় ।‘
মেলার চারিদিকে আহারের উৎসব ।এমন কি ভাগ্য পরীক্ষার যে জুয়া খেলার দোকান সেখানেও জিতলে মিলবে সেদ্ধ ডিম । একটা নম্বর লেখা কাঁটা লাগানো গোল চাকতি ঘুরিয়ে দেওয়া হবে । খেলুড়ে তার পছন্দের একটা নম্বর বলবেন ।
চাকতি ঘুরতে ঘুরতে যদি সেই নম্বরেই এসে থামে তবে সেখানে যে সংখ্যা লেখা থাকবে তার দ্বিগুণ সংখ্যক ডিম মিলবে খদ্দেরের । আর না মিললে খেলুড়ে যে টাকা দিয়ে বাজি লাগিয়েছিলেন তার সবটাই যাবে দোকানির পকেটে । দোকানদার চেঁচাচ্ছেন – ‘সেদ্ধডিম- সেদ্ধডিম’
কিছুদিন পরে রঘুনাথ জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বারে দাঁড়ানো ছেড়ে দিলেন । মহাপ্রভু শুনে বললেন তবে রঘুনাথ খায় কি ? স্বরূপ দামোদর বললেন এখন রঘুনাথ বৈষ্ণবদের ছত্রে ছত্রে ভিক্ষা করে খায় ।
এবারও মহাপ্রভু খুশি হয়ে বললেন- ‘ভাল কৈল ছাড়িল সিংহদ্বার।/ সিংহদ্বারে ভিক্ষা বৃত্তি বেশ্যা ব্যবহার।।/’এই বলে তিনি তাঁর গোবর্ধন শিলা আর গুঞ্জামালা রঘুনাথকে দিলেন ।
মেলার রাস্তার পাশে ভাজা মাছের স্টল । কি মাছ নেই সেখানে,
পমফ্রেট-ভেটকি-ভোলা-আমুদি-লটে-চিংড়ি-খয়রা-ইলিশ। দাম পাঁচ থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত । দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলাম এই মাছ কি আজই কিনে ভাজছেন ? দোকানদার বল্লেন-না ।বেশ কিছুদিন ধরে মাছ সংগ্রহ করছেন আজকের দিনের দিকে তাকিয়ে ।
সকাল সকাল তাই এসে পড়েছেন ।
মাছ ভাজা বিক্রি ও হচ্ছে খুব । ওঁর আরেক সহযোগী সাদা কাগজে বড় বড় করে লিখছেন ‘এখানে মাছ ভেজে দেওয়া হয়’।
কেউ হয়ত মাছ রাঁধা বা ভাজার সরঞ্জাম সঙ্গে আনেন নি কিন্তু এত মাছ দেখে উৎসাহী হয়ে পড়েছেন,
খানিক চেখে দেখার বাসনা জেগেছে মনে,
ফিরে যাবেন না তিনি ও। মাছ কিনে দোকানদারকে দিলেই নামমাত্র মূল্যে ভেজে দেবেন তিনি।
খেতে খেতে মজা করে ঘুরবেন মেলায়-
দিন যায়।
রঘুনাথ ক্রমেই সাধনায় আরো নিমগ্ন হয়ে পড়েন। সাড়ে সাত প্রহর চলে যায় পূজার্চনায়, বাকি চার দন্ড থাকে আহার নিদ্রা বাবদ। কিন্তু কি খান রঘুনাথ? পুরীতে দোকানদাররা খরিদ্দারের জন্য যে ভাত রাঁধেন প্রতিদিন , তার সবটাই তো আর বিক্রি হয়না । এইভাবে দু-তিন দিন বিক্রির আশায় জমিয়ে রাখতে রাখতে ভাত পচে যায় ।
তখন তা থেকে এমন গন্ধ বেরোয় যে গরুও খেতে পারে না মানুষ কোন ছার। চৈতন্যচরিতামৃতে আছে- ‘সড়া গন্ধে তৈলঙ্গ গাই খাইতে না পারে’।
সেই ভাত রাত্রিবেলা রঘুনাথ ঘরে নিয়ে আসেন,
তারপর ধুয়ে ধুয়ে তার উপরের পচে যাওয়া অংশ ফেলে ভিতরের মজ্জা বার করে নেন আর তাতে নুন মাখিয়ে খেয়ে নেন । এ খবর পেয়ে একদিন স্বরূপ, আরেক দিন স্বয়ং শ্রীচৈতন্য জোর করে রঘুনাথের থেকে সেই ভাত কেড়ে খেলেন আর বললেন- ‘নিতি নিতি নানা প্রসাদ খাই/ঐছে স্বাদ আর কোন প্রসাদে না পাই।' এমন স্বাদ দুনিয়ার কোনো প্রসাদে নেই।
মেলায় আছে কাসুন্দি মাখানো পেয়ারা আর কমলালেবু একেকটা পাঁচ টাকা করে।
আছে ঝাল মুড়ি, দশ টাকায়।দূরে সরস্বতী নদীতীরে মাদুর বিছিয়ে কেউ কেউ বসে পড়েছেন রান্নার আয়োজনে। নদীর অপর পাড়ে চাষের ক্ষেত।
সেদিক থেকে একটা অস্থায়ী বাঁশের সেতু রাতারাতি কেউ বা কারা বানিয়ে ফেলেছে এ পারে রঘুনাথ দাসের শ্রীপাটের দিকের ঘাট বরাবর। নড়বড়ে সেই সেতু থানার বড়বাবু নিজে দাঁড়িয়ে ভেঙ্গে ফেলছেন।
একটু পরেই দলে দলে লোক ওপার থেকে এপারে আসার চেষ্টা করবে।
তাদের অধিকাংশই নাকি মত্ত অবস্থায় থাকবে। এরকম হুঁশ হীন কেউ জলে ডুবে মারা গেলে মুখ পুড়বে বড়বাবুর।
তাই তিনি কারো কথা শুনবেন না।
এ সেতু ভাঙ্গতেই হবে।সেইসঙ্গে এক্ষুনি একটা নোটিশ লিখতে হবে যে- 'এই সেতু পারাপারের জন্য বিপজ্জনক '।
রঘুনাথের শ্রীপাটের পিছনেই মাছের ব্যবসায়ীরা বসে আছেন।
মনুষ্য থেকে শুরু করে তার পোষ্য বিড়ালের জন্যও মাছ পাওয়া যায়।
কোনো কোনো দেকানে এরকম বিজ্ঞাপনও দেখলাম। কাতলা দুশো টাকা,
রুই দেড়শো টাকা, পাঙ্গাস দেড়শো, ভেটকি তিনশো, শঙ্করমাছ চারশো, আড় ছশো- চিৎকারে চিৎকারে মেলা সরগরম।
কাঁকড়াও রয়েছে।
ছোট কাঁকড়ার দাম চারশো, বড় কাঁকড়া
ছশো, আর মেয়ে কাঁকড়া সাতশো। নেট দিয়ে বন্ধ করা সেই ঝুড়ি ভরা কাঁকড়ার দিকে মেয়েরা তাকাচ্ছেন না। তাঁদের নজর সাজগোজের জিনিসে, ঠাকুর দেবতার কাঠে বাঁধানো ছবিতে।
ফুলুরি পেঁয়াজি আর চপের দোকান আছে,
আছে কড়াইশুঁটি আলু গাজরের দোকান, বনভোজনে লাগবে।আছে হাত দিয়ে ঘোরানো কাঠের নাগরদোলা, গোল করে ঘোরানোর কাঠের ঘোড়ার দোলনা, হাওয়া ভরা বিশাল গদি, যার উপরে লাফানো যায়।দুপুর হয়ে আসে।
চারিদিকে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।রঘুনাথ দাসের শ্রীপাটে কীর্তন শুরু হয়েছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে চটি একটা বই। আজকাল নানা ঐতিহ্যশালী মেলায় এরকম বই বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোর বিষয়বস্তু মেলার মাহাত্ম্য।
আগ্রহী হয়ে কিনলাম একটা।
কুড়ি টাকা দাম। কিনে দেখি ‘হুগলি জেলার ইতিহাস
ও বঙ্গসমাজ’ বইয়ের একটি পরিচ্ছেদ ছাপিয়ে বিক্রি করছেন ওঁরা। বৈধতার প্রসঙ্গ না তুলেও বলা যায় এই সুবাদে কেউ কেউ তো জানলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে, এই পাওয়াই বা কম কি।
হুগলী জেলার ইতিহাস বইতে শ্রীপাটের সেবায়েত হিসেবে নাম পেলাম শ্রীবিজয় চক্রবর্তীর। আর ওখানে গিয়ে শুনলাম বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর নাম। সেবার অধিকার হাত ফেরতা হয়ে বিজয়কৃষ্ণের কাছে এসেছিল। সেই থেকে ওই পরিবারেই আছে। ওঁর সাত ছেলে।
বড়ছেলের নাম শৈলেন গোস্বামী।
শৈলেনবাবু প্রয়াত। তাঁর বাকি ছয় ভাই এখন রঘুনাথ দাসের শ্রীপাটের সেবা করেন। পয়লা মাঘেই এখানে একমাত্র মালসাভোগ হয়। এই ভোগে থাকে চিঁড়েমুড়কি। শৈলেনবাবুর পরের ভাই জানালেন উত্তরায়নের দিন এখানে সাতশো ন্যাড়ানেড়িকে খাওয়ানো হয়েছিল। তারাই নাকি ইলিশমাছ আর আমের টক খাওয়ার আব্দার করেছিল। শীতের এই অসময়েও তাদের ইচ্ছেমত ইলিশ আর পাশের বাগানের আমগাছ থেকে আম পেড়ে টক খাওয়ানো হয়েছিল। অকালের ফসলের সেই দুর্লভ প্রাপ্তিকে স্মরণ করেই এই মেলা মাছের মেলা। এই পদ খাওয়ার চল এখনো আছে।
হুগলী জেলার ইতিহাস বইতে আরো আছে যে ‘এই মেলা আজ সাড়ে চারিশত বৎসর ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে’। দ্বিপ্রহরে এক বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা হল, বাড়ি বাঁশবেড়িয়ায়। ব্যকুল হয়ে বললেন ওই পিকনিকের জায়গাটা একটু দেখিয়ে দিন না। কাছের আমবাগানের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করায় সেইদিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন। খুব ছোটো বেলায় মা-বাবার সঙ্গে এই মেলায় বেড়াতে এসেছিলেন সেই কথা মনে পড়ে যায় তাঁর ।একবার পানিহাটিতে এসেছেন প্রভু নিত্যানন্দ। শুনে সন্ন্যাস গ্রহণেচ্ছু রঘুনাথ গেলেন দেখতে। মুখচোরা কিশোরকে দেখে দূর থেকেই ডেকে নিলেন নিত্যানন্দ। আর বললেন উপস্থিত সবার জন্য দই চিঁড়ার ব্যবস্থা করতে। আনন্দিত হয়ে রঘুনাথ তাঁর গ্রামে লোক পাঠিয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করলেন দুধ-দই-চিঁড়ার এক মহাভোজের। সেই থেকে আজও পানিহাটিতে হয়ে আসছে চিঁড়া মহোৎসব। বৃদ্ধ তাকিয়ে আছেন। মানুষ আহার করছে সেইদিকে তাঁর নজর। রঘুনাথ সাধনার সময়ে আহারকে গৌন করে তুলেছিলেন। পচা ভাতে নুন মাখিয়ে খেয়ে যিনি দিনাতিপাত করেছেন তাঁর স্মরণে মানুষ খাবারের উৎসবে মেতেছে। যৌবনে যে রঘুনাথ সুন্দরী স্ত্রীকে ত্যাগ করে ঈশ্বর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন সেই তিনিই পরিণত বয়সে বৃন্দাবনে বসে লিখলেন ‘মুক্তাচরিত’। যাতে আদিরস কিছু কম নেই। বৃদ্ধের জিভে লালা এসে গেছে। এ বাসনার লালা নয়, তাঁর স্মৃতির ভিতর আহারের উৎসবের মধ্যে দিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রঘুনাথ। বিড়বিড় করে বৃদ্ধ বললেন এই মেলায় হয়ত এই শেষ বার, তারপর তাঁর পরেও নাতিপুতির জন্য রয়ে যাবে হরিনাম সংকীর্তন আর মৎসাহারকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য বাঙালীর এই ঐশ্বরিক বনভোজনের মেলা।
কিভাবে যাবেনঃ- ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে অটো করে চলে
যান দেবানন্দপুরের দিকে। দেবানন্দপুরের পর চন্দনপুর তারপর কেষ্টপুর। সড়ক পথে এলে
দিল্লি রোড হয়েও আসা যায়।
মেলায় আসার পথে
ছায়াচ্ছন্ন পথে কেউ হেঁটে কেউ গাড়িতে চলেছে
মেলার ঠাকুর-দেবতারা
সপ্তগ্রামে মুসলমান আক্রমণের সময়ে বিগ্রহগুলি সরস্বতী নদীতীরে পুঁতে রাখা ছিল রঘুনাথ দাস শিষ্য কৃষ্ণকিঙ্কর গোস্বামীকে পাঠিয়ে সেগুলি পুনরুদ্ধার করেন।
রঘুনাথ দাস গোগ্বামীর প্রতিকৃতি
মাছ নিয়ে যত কর্মকান্ড
যে গাড়িতে মাছ আসে
মাছ এলে তা সাজিয়ে রাখতে হয়, যাতে খদ্দের আসে
কেষ্টপুরের মাছমেলার সাথে রঘুনাথ দাসের জীবন বর্ণনা ..দারুণ ! সাথের ছবিও , salmon মাছও নাকি পাওয়া যাচ্ছিলো এবারের মেলায় ? ! !
উত্তরমুছুনপ্রতিবেদনটি ভালো লাগলো। ছবি চমৎকার।
উত্তরমুছুনপ্রতিবেদনটি ভালো লাগলো। ছবি চমৎকার।
উত্তরমুছুনপ্রতিবেদনটি ভালো লাগলো। ছবি চমৎকার।
উত্তরমুছুন